
মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
১। ১৪ জনকে আসামী করে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ২০১৮ এর ধারা ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৭, ২৯ ও ৩১ এর অধীন ঢাকা রেলওয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ২৫ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে পিএইচডি গবেষক জনাব X দেশে আসার সময় ঢাকা বিমান বন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে বিভিন্ন মেয়াদে ৩ বার পুলিশ রিমান্ডে নেওয়া হয়। বিগত ৩ জানুয়ারী ২০১৯ তারিখে মাননীয় জেলা ও দায়রা জজ, ঢাকা তার জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করেন। উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে জামিনের জন্য মামলাটি হাইকোর্টে আসে।
২। ২৪ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ধারা ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৭, ২৯ ও ৩১ এর অধীনে মামলা দায়ের হয়। অভিযোগের প্রয়োজনীয় অংশ নিম্নে তুলে ধরা হলঃ
“ওয়েব সাইটের মাধ্যমে অনলাইন পত্রিকায় রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী বিভিন্ন প্রচার, প্রচারণা, ভূয়া, গুজব সৃষ্টি ও বিকৃত সংবাদ পরিবেশন, মাননীয় প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মাননীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা, মন্ত্রী পরিষদের বিভিন্ন মন্ত্রী বর্গের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে আসছে। স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে তার ল্যাপটপ হতে ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে তাতে ১) অখ্যাত জরিপের মাধ্যমে নিজের মাকে জনপ্রিয় বানালেন জয় ২) এনালাইসস বিডি জরিপের মাধ্যমে আওয়ামী-১৪%, বিএনপি-৮৬% ৩) অবৈধ মন্ত্রীর সালাম না নিয়ে স্বৈরাচার হাসিনা বাহিনীকে লজ্বায় ফেললো চাঁদপুরের জনগণ ও মন্ত্রী ফাটাকেষ্ট কাদেরের সালাম না নিয়ে হাসিনা বাহিনীকে লজ্বায় ফেললো চাঁদপুরের জনগন, ৪) ছিঃ হাসিনা লজ্বায় বাঁচিয়া না বাংলাদেশ হারেনি হেরে গেছে হাসিনা (ভিডিও সহ) ৫) লন্ডনে শেখ হাসিনার উপর জুতা-ডিম নিক্ষেপের ঘটনা চাপা দিতেই তারেক ইস্যু? ৬) শেখ হাসিনার ১৫ মামলার প্রত্যাহার করিয়ে নেয়ার নেপথ্যে অবাক করা কারণ ৭) সামনে জাতীয় নির্বাচনঃ রাজনীতি ফেরা ক্ষমতাসীন দলের বেড়েছে অবৈধ অস্ত্রের দাপট…১৮) আওয়ামী লীগের আসল শত্রুকে- বিএনপি, জামাত না সুশীল সমাজ…২৪) নয় উন্নয়ন দেশের নয়, উন্নয়ন হয়েছে আওয়ামী লীগের আশরাফ পাহেলী…২৫) মুক্তিযুদ্ধ শেষে সাতাশ শো কোটি টাকার অস্ত্র সরঞ্জাম লুট করেছিল ভারতীয় সেনা বাহিনী, আমাকে ব্যবহার শেষে আওয়ামী লীগ এখন ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে- তুরিন আফরোজ…৩০) গরম খবর- সরকারের বহিষ্কারের আগেই আমেরিকা যাচ্ছে মাহবুব তালুকদার…৩৩) শাপলা চত্তরে রক্তের সঙ্গে বেইমানী করে ঐক্য নয়- বাবুনগরী…৩৫) রাজাকারের তালিকার শীর্ষে আওয়ামী লীগ, শীর্ষ ৪৬ জন রাজাকারের তালিকায় আওয়ামী লীগ নেতা।”
এই সকল অনলাইন ভিত্তিক প্রচার প্রচারণার কারণে সে সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অত্র মামলা দায়ের করা হয়।
৩। ২৪ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে তার ল্যাপটপ জব্দ করে। তার পাসপোর্ট ও মানি ব্যাগ হতে এটিএম কার্ডও জব্দ করে। তার ল্যাপটপ থেকে উল্লিখিত ডকুমেন্টস উদ্ধার করে মর্মে পুলিশ দাবি করে। ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে তাকে বিজ্ঞ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা এর আদালতে হাজির করা হয়। সাথে সাথে তার ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করা হয়। মাননীয় আদালত ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ড শেষে ২৯ নভেম্বর ২০১৮ তারিখ আরও ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদন করে। মাননীয় আদালত আবারো ১ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। উক্ত রিমান্ড শেষে ১ লা ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে তাকে আদালতে উপস্থিত করে। অতঃপর তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
৪। ৩রা জানুয়ারী ২০১৯ তারিখে মাননীয় জেলা ও দায়রা জজ তার জামিন না-মঞ্জুর করেন। উক্ত আদেশের প্রয়োজনীয় অংশ উল্লেখ করা হলঃ
Since the accused Petitioner humiliated the dignity and integrity of the Honorable Prime Minister and her son and some honorable Minister of Bangladesh by releasing some fake and untrue news in the internet and the custody of the accused Petitioner is very short, the Petition for bail of the accused Petitioner X is rejected.
মামলার সইমহুরি নকল কপি হাতে পেয়ে দ্রুত প্রস্তুতি গ্রহণ করি। এফিডেভিট সম্পন্ন করে এনেক্স ১৬ নং আদালতে জমা দেই। জুনিয়রদের নিয়ে রিসার্স করে পাই যে, ইতোমধ্যে যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি আইনের ধারা ৫৭ কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে মাননীয় বিচারপতি জনাব মইনুল ইসলাম চৌধুরির নেতৃত্বে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করেন। অধিকন্তু ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট কোর্ট শ্রেয়া সিংহল বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া মামলায় একই রকম আইনের ধারা ৬৬ক অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে। মনে মনে চিন্তা করি এই দুটি বিষয় আদালতের সামনে তুলে ধরব। যদিও মামলার বিষয়বস্তুতে সংবেদনশীলতা আছে। তবুও দৃঢ়তার সাথে উপস্থাপন করতে হবে।
৫। মামলার সিরিয়াল নং ডাকা হলে আমি কিছুটা অস্বত্তি বোধ করি। আমি বলি “My Lords, the accused Petitioner, allegedly, posted some derogatory comments in social media about the respectable members of the society. These were nothing but propaganda and expression of opinion in online media. Article 39 of the Constitution guaranteed freedom of speech and expression subject to reasonable restrictions. Already a senior bench of this Court was pleased to issue a rule nisi as to why section 57 of the Information and Communication Technology Act, 2006 would not be declared unconstitutional on the ground of violation of Article 39 and vagueness in the definition of law. Moreover, the similar provisions have been declared unconstitutional by the Indian Supreme Court in the case of Shreya Singhal vs. Union of India, reported in AIR 2015 (SC) 1523. More specifically in the United States [United States of America vs. Anthony Elonis, reported in 730 F.3d 321], any post or comment made in the social media does not constitute offence unless an actual act is done pursuant to that comment. Therefore, for argument’s sake if I admit the facts at best this can be termed as propaganda ahead of national election.”
এই কথাগুলো বলে আমি চুপ হয়ে গেলাম। বিচারপতিগদ্বয় পরস্পর করলেন। সিনিয়র বিচারপতি আস্তে করে উচ্চারণ করলেন, “মিঃ শিশির মনির, বেইল।”