
অনলাইন এক্টিভিজম ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
১। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে জিডিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ সংসদে পাশ হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে এটি কার্যকর হয়। এই আইনের বিধান নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে এবং হচ্ছে। কেউ বলছেন আইনটির মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হবে, সমালোচনার রাস্তা বন্ধ হবে আবার কেউ বলছেন ইন্টারনেট ভিত্তিক প্রচার প্রচারণা বাধাগ্রস্থ হবে। ইতোমধ্যে এই আইনের অধীনে বেশ কিছু ফৌজদারী মামলা দায়ের হয়েছে।
২। ১৪ জানুয়ারী ২০১৯ তারিখে এই রকম একটি ফৌজদারী মামালার নথি আমার হাতে আসে। আমি কৌতুহলী হয়ে নথিটি বারবার পর্যালোচনা করি এবং আমার আশপাশের অনেকের সাথে পরামর্শ করি। বোঝার সুবিধার্থে ঘটনাটি নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ
৩০ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে অভিযোগকারী ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগ, কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট পুলিশ পরিদর্শক রমনা মডেল থানায় এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করেন যে, তিনি অনলাইন মনিটর করাকালীন দেখতে পান একটি ইউটিউব টিভি চ্যানেলে সরকার ও রাষ্ট্র বিরোধী কিছু মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্চে। তিনি আরও দেখতে পান যে, বিভিন্ন শিরোনামে কতগুলো ভিডিও উক্ত চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে। তন্মেধ্যে, ‘৫২, ৬৯ ও ৭১ এর মত সরকার পতন আন্দোলনের ডাক’; ‘কি হচ্ছে দেশে! মহাযুদ্ধের ডাক!’; ‘দেখুন কোন দলের কি পরিকল্পনা’;‘২৪ ঘন্টার মধ্যে খালেদাকে হাসপাতালে না নিলে তিনি হয়ত শেষ হয়ে যেতে পারেন!’; ‘হায়! ঘায়! জেলখানায় খালেদাকে মেরে ফেলা হচ্ছে! বিএনপিতে কান্নার রোল বইছে’;‘বিএনপির মানব বন্ধনে পুলিশ লীগের হামলার সরাসরি ভিডিও দেখুন! দেশ ব্যাপী গ্রেফতার করছে পুলিশ লীগ’; ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘ, পুলিশ যাকে ইচ্ছা তাকেই ধরতে পারবে’; ‘সিনহাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে নতুন রাষ্ট্রদূত পাঠাল ট্রাম্প, দেখুন রাষ্ট্রদূতের পরিচয় কি’ উল্লেখযোগ্য।
এরই প্রেক্ষিতে অভিযোগকারী আসামী মোঃ X কে তার বর্তমান বাসা মিরপুর-১০ এ অভিযান পরিচালনা করে স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে আসামীকে গ্রেফতার করেন এবং আসামীর ফোন সেট, মাউথ পিছ, সাউন্ড রেকর্ডার ও সিপিইউ জব্দ করেন। অভিযোগকারী পুলিশ পরিদর্শক নিজ অফিসে বসে উল্লিখিত ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত কতগুলো ভিডিওর স্ক্রিনশট সংরক্ষণ করেন।
৩১ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে আসামীকে বিজ্ঞ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এর আদালতে হাজির করে সাত (৭) দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করা হয়। বিজ্ঞ আদালত সার্বিক বিবেচনায় দুই (২) দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ০৩ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে আসামীকে আদালতে হাজির করা হয় এবং আদালতকে জানানো হয় যে, আসামী ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদানে ইচ্ছুক। এরই প্রেক্ষিতে ০৩ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে আসামী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। উক্ত জবানবন্দী নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলঃ
“আমি ইউটিউবে ২টি TV Channel: AR Tv ও Bangla Tube info চালু করি। আমি আমার ই-মেইল [email protected] দিয়ে ইউটিউবে চ্যানেল টিভি খুলি। টিভি চ্যানেল খুলে আমি সরকার ও রাষ্ট্র বিরোধী মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভিডিও আপলোড করি। আপলোড করা ভিডিও এর নাম ৫২, ৬৯, ৭১ এর মতো সরকার পতনের ডাক এবার আর হাসিনার রেহাই নাই, মহা যুদ্ধের ডাক, দেখুন কোন দলের কি পরিকল্পনা ইত্যাদি প্রচার করি। এইমাত্র পাওয়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খালেদাকে হাসপাতালে না নিলে তিনি হয়ত শেষ হয়ে যেতে পারেন। এই মাত্র পাওয়া হায়া! হায়! জেল খানায় খালেদাকে মেরে ফেলা হচ্ছে এই খবর প্রচার করি। আমি আরো আপলোড করেছি যে, বিএনপির মানববন্ধনে পুলিশলীগের হামলায় সরাসরি ভিডিও দেখুন। দেশব্যাপী গ্রেফতার করছে পুলিশলীগ, দেশে শুরু হচ্ছে গৃহযুদ্ধ, পুলিশ যাকে ইচ্ছে তাকেই ধরতে পারবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে, জাতিসংঘ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের জন্য উদ্ধেগ জানিয়েছেন, সিনহাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে নতুন রাষ্ট্রদুত পাঠালো ট্রাম্প, দেখুন নতুন রাষ্ট্রদূতের পরিচয় কি ইত্যাদি ভিডিও আপলোড করেছি। আমি এই ইউটিউব চ্যানেল ২টি খুলেছি সত্য। এই আমার জবানবন্দি।”
৩। কয়েকজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে পরামর্শ সাপেক্ষে জামিন আবেদনটি দায়ের করি। ২১ জানুয়ারী ২০১৯ তারিখে মামলাটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। বেলা ২ টা হতে আদালত কক্ষে অপেক্ষারত ছিলাম। বেঞ্চ অফিসার আইটেম কল করলে আমি বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করি। আমার বক্তব্য ও আদালতের সাথে কথোপকথন নিম্নে প্রদত্ত হলঃ
“My Lord, the instant case is under sections 25 and 31 of the Digital Security Act, 2018 and I have a confessional statement admitting that I have opened up the YouTube Channel and uploaded the alleged videos. My humble submission before your Lordships that opening up YouTube Channel and uploading anti-government videos are my constitutionally guaranteed fundamental rights under Article 39 of the Constitution.
His Lordships asked me ‘you have confessed your guilt, why should we grant you privileges of bail?’
I answered ‘even if I confessed that I opened up YouTube Channel and uploaded videos, I did it pursuant to my constitutional right. Moreover, the similar provisions of law have been declared unconstitutional by the Indian Supreme Court in the case of Shreya Singhal vs. Union of India, reported in AIR 2015 (SC) 1523. Further, our Hon’ble High Court Division also questioned the constitutionality of section 57 of the Information and Communication Technology Act, 2006. More specifically, recently the American Court of Appeals for the Third Circuit held that any Facebook post not followed by an act would not constitute offence in the case of United States of America vs. Anthony Elonis, reported in 730 F.3d 321.
Their Lordships again asked ‘your constitutional right is not unfettered rather subject to reasonable restriction?’
I answered ‘yes’. Certainly by opening up YouTube Channel and uploading anti-government videos, I did not cross the reasonable restrictions imposed by the Constitution. This is fair criticism. In this digital age, I have freedom to conduct my criticism against the government using all modern tools and techniques. YouTube and video footage are such modern tools to express my opinion within the four corner of the constitutional right guaranteed under Article 39. Therefore, your Lordships should exercise your discretionary power of bail in my favour.”
Their Lordships consulted one another and ordered that ‘Yes, bail granted.’
I expressed my gratitude and very humbly uttered ‘much obliged to your Lordships’.