সাজার মেয়াদ ১ বছর,কারান্তরীণ ৫ বছর
নিম্ন আদালতের বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব মুজাহিদুল ইসলাম একদিন ফোন করে জানতে চাইলেন যে, একজন আসামীর একটি চেকের মামলায় এক বছরের সাজা হয়েছে। অথচ তিনি প্রায় ৪ বছর ধরে কারাগারে আছেন। কারণ নিম্ন আদালতের বিচারকগণ ভুল করে পলাতক দেখিয়ে আদেশ জারি করেছেন। অথচ তিনি ২০১৬ সাল থেকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার, গাজীপুরে বন্দী আছেন। তার কথায় আমি বিস্মিত হলাম এবং বিশেষ জজ আদালত নং- ৮, ঢাকা এর আদালতে আসামীকে রিলিজ প্রদানের জন্য প্রার্থনা করে দরখাস্ত দায়ের করতে বললাম। এই দরখাস্তের প্রেক্ষিতে ১০ জুলাই ২০১৯ তারিখে বিশেষ জজ আদালত নিম্নোক্ত আদেশ প্রদান করেনঃ
“পর্যালোচনাক্রমে প্রতীয়মান হয় যে, অত্র আসামী অত্র মামলায় অত্র আদালত হতে প্রদত্ত সাজা ভোগ করেন নি। বরং আসামীকে পলাতক গণ্যে রায় প্রচারিত হয়। রায় প্রচারের পর অত্র আদালত অত্র আসামী আত্মসমর্পণ পূর্বক কোন প্রার্থনা করেনি বা আদালতে হাজির হন নি। অর্থাৎ অত্র আসামী অদ্যাবধি অত্র মামলার সাজা ভোগ শুরুই করেনি। এমতাবস্থায়, আসামী পক্ষের বিজ্ঞ কৌসুলী কর্তৃক ১৯/০৬/২০১৯ খ্রিঃ তারিখের আনীত দরখাস্ত নামঞ্জুর করা হল।”
২। সাজাপ্রাপ্ত আসামী মোঃ V ০৬ আগস্ট ২০১৯ তারিখে জেল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিশেষ জজ আদালত-৮ বরাবর একটি দরখাস্ত দায়ের করেন। উক্ত দরখাস্তে তিনি উল্লেখ করেন যে, “আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী মোঃ V সুত্রস্থ মামলামূলে বিগত ০৫/০৮/১৫ ইং তারিখ হতে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছি। আমাকে আদালতে হাজির করা হয় না। স্যার, আমি আমার আইনজীবীর মাধ্যমে জানতে পারি আমার অনুপস্থিতিতে সাজা করা হয়েছে। উক্ত মামলায় পরোয়ানা ইস্যু করলে হাজতবাস সাজা হতে বাদ দিলেই আমি মুক্তি লাভ করিব।”
৩। ০৬ আগস্ট ২০১৯ তারিখে সিনিয়র জেল সুপার কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার, গাজীপুর বিশেষ জজ আদালত ৮ এর বরাবরে একটি পত্র প্রেরণ করেন। উক্ত পত্রে উল্লেখ করেন যে, “সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বিষয়োক্ত বন্দী সুত্রস্থ মামলায় বিজ্ঞ আদালতে হাজিরার জন্য/সাজার পরোয়ানা ইস্যু করার জন্য একটি স্ব-ব্যাখ্যাত আবেদন পত্র এ দপ্তরে দাখিল করেন। উক্ত আবেদন পত্রটি বিজ্ঞ আদালত সমীপে সবিনয়ে প্রেরণ করা হল। উল্লেখ্য যে, উক্ত বন্দী ২০ টি মামলার অন্তর্বর্তীকালীন হাজতের পরোয়ানা নিয়ে কারাগারে আগমণ করেন। ইতোমধ্যে তিনি ১৯ টি মামলা হতে জামিন/খালাস পেয়েছেন। বিগত ১৯/০১/২০১৬ তারিখে সুত্রস্থ মামলায় ঢাকার বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করানো হলে তৎকালীন হাজতের পরোয়ানায় তলব মতে লিপিবদ্ধ লিখে কারাগারে ফেরত দেওয়া হয়। সুত্রস্থ মামলায় তাকে হাজির করার বিষয়ে আর কোন নির্দেশনা পাওয়া যায় নি।”
৪। নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ০৫ আগস্ট ২০১৫ তারিখে মোঃ V কে ওয়ারেন্ট মূলে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, মুন্সিগঞ্জ এ হাজির করা হয়। অত্র আদালত তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে বিজ্ঞ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ঢাকা বিশেষ দায়রা মামলা সংক্রান্তে আসামী মোঃ V এর বিরুদ্ধে পি ডব্লিউ ইস্যু করে। ২৪ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মহানগর দায়রা জজ আদালত, ঢাকা তার আদেশে উল্লেখ করেন যে, “Accused মোঃ V is on bail. Perused the petiton of complaint and connected papers. Cognizance taken against the accused under section 138 of the Negotiable Instruments Act, 1881.”। ১২ মে ২০১৯ তারিখে বিশেষ জজ আদালত, ঢাকা এর আদেশে উল্লেখ করা হয় যে, “একমাত্র আসামী মোঃ V পূর্ব আদালত থেকে জামিনে আছে। আগামী ১২/০৬/২০১৬ ইং তারিখে আসামী উপস্থিতি ও চার্জ শুনানির জন্য।” ১২ জুন ২০১৬ তারিখের আদেশে উল্লেখ করা হয় যে, আসামী জামিনে থাকিয়া বিনা তদবীরে গর হাজির থাকায় জামিন বাতিল করা হইল। ডব্লিউ এ ইস্যু করা হোক। সেই থেকে আইনের চোখে তিনি পলাতক। বস্তুত তিনি সবসময়ই কারাগারে অন্তরীন। আইনের চোখ এখানে অন্ধ। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ইং তারিখে অত্র মামলায় তার ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ২৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অথচ তিনি প্রায় পাঁচ বছর ধরে কারাগারে অন্তরীন আছেন।
৫। এহেন পরিস্থিতিতে নথি পর্যালোচনায় একটি Habeas Corpus রিট পিটিশন দায়ের করবার সিদ্ধান্ত নিই। উভয় পক্ষকে শুনানিঅন্তে ০৯ মার্চ ২০২০ তারিখে মাননীয় আদালত নিম্নোক্ত আদেশ প্রদান করেনঃ
“Now upon hearing Mohammad Shishir Manir, Advocate for the Petitioner, Mr. Amit Talukder, DAG with Toufiq Sarwar, AAG, Mr. MMG Sarwar (Payel), AAG and Mr. Md. Samiul Alam Sarkar, AAG for the Respondents and upon consideration of the said petition this Court doth order and do issue a Rule Nisi calling upon you the aforesaid Respondents to show cause on or before the 16th April 2020 as to why they should not be directed to bring the Petitioner who is now in custody in connection with Special Sessions Case No. X before this Hon’ble Court so that this court may satisfy itself that he is not being held in custody without lawful authority or in an unlawful manner and/or pass such other or further order or orders as to this Court may seem fit and proper.
Pending hearing of the rule, the Respondents No. 4 to 6 are directed to release the petitioner who is now in custody in connection with Special Sessions Case No. X immediately.
The Respondent No. 3 is directed to transmit the case record before 30.04.2020 at 10.30 am with his national ID card.”
এই আদেশের ভিত্তিতে জনাব মোঃ V কারাগার থেকে মুক্তি পান। বিষয়টি জাতীয় সকল দৈনিকে প্রকাশিত হয়। তিনি মুক্তি পেয়ে আমার সাথে দেখা করতে আসেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আমি তার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করি।